সত্ত্ব রজঃ তম এই তিনটি গুণ কি
সত্ত্ব রজঃ তম এই তিনটি গুণ কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবত গীতায় সাংখ্যযোগে সৃষ্টির তিনটি গুণের কথা বলেছেন, যে গুণের দ্বারা মানুষের স্বভাব, চরিত্র ও ব্যবহার নির্মাণ হয়, সেটি হল সত্ত্ব রজঃ তম এই তিনটি গুণ প্রকৃতির দ্বারা উৎপন্ন কিন্তু প্রকৃতির কাজ শরীরের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক মান্য করার কারণে এই গুণ অবিনাশী ও এ গুণ জীবাত্মাকে না, শরীর তত্ত্বের আবদ্ধ করে দেয়। রজঃ তম গুণ লৌকিক ও পরলৌকিক উন্নতি হতে দেয় না।
নিজের জীবনের গতি বাড়ানো হলো রজস আর গতিকে থামানো হলো তমস অর্থাৎ আলস্য। আমাদের জীবন চালানোর জন্য স্পিড, বা থামানোর জন্য ব্রেক এই দুটিরই প্রয়োজন হয় অর্থাৎ আমাদের জীবনের এই গুণ দুটি প্রয়োজন কিন্তু আমাদের এটা জানা প্রয়োজন আমাদের এদের কি করে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও এদের কি নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন আছে? আপনি নির্ধারন করতে পারে না যে একজন ব্যক্তির কি করা দরকার! যাদের রজ গুণ বেশি আছে তারা খুব দ্রুত গতিতে যাবে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তাদের বেশি আছে।
তমগুণ
'তম' শব্দের অর্থ অন্ধকার এবং 'তমঃ' থেকেই তামসিক শব্দের উৎপত্তি। তমঃ গুণ আমাদের অন্ধকার এর মতো ভ্রমিত করে রাখে। তমোগুণ অজ্ঞানতা থেকে উৎপন্ন হয়ে মানুষ কে মোহিত করে। ভ্রম ও মায়ার অবরন যা বিবেক কে ঢাকা দিয়ে আনন্দে নিমজ্জিত করে মানুষের ওপর অধিকার স্থাপন করে। যে ব্যক্তির ইন্দ্রিয় ও অন্তঃকরনে স্বচ্ছতা থাকে না ও যার কোনো কাজ করার ইচ্ছে থাকে না, তাদের অন্তরে মোহ আচ্ছন্ন হতে শুরু। তারা ভালো- মন্দের বিচার ব্যাতীত জীবন নির্বাহ করে। কীটপতঙ্গ পশুপাখিরা যেমন শারীরিক ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মেটানোর জন্যই জীবন অতিবাহিত করে। কারোর সকল আদেশ বিন দ্বিধায় পালন করাকে তমশিক আচরণ বলা হয়। অন্যভাবে কেবল শরীরিক চাহিদা অর্থাত্ ক্ষুধা, যৌন চাহিদা, আলস্য ও নিদ্রা ও মাদক দ্রব্য গ্রহণ করে জীবন কাটাই । এর ফলে তাদের লৌকিক ও পরলৌকিক উন্নতি হতে দেই না।
রজগুণ
রজ গুণ মানুষকে স্বার্থপর তৈরি করে তার প্রভাবে মানুষ নিজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যক্তিদের কষ্ট দেয়। ইনারা প্রত্যেকটা জিনিসের মধ্যে নিজের লাভ দেখে। এর কারণে মানুষ লোভি হয় খুব বেশি গতিতে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এনারা দান করলেও সেখানে নিজের নাম খোদাই করা পাথর বসায়। অর্থ ও সম্পত্তির লোভের জন্য নিজের পুরনো স্ত্রী কে ত্যাগ করে সুন্দরী কন্যা কে ও বিয়ে করে। অন্যের সঙ্গে প্রতিস্পর্ধা করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত করতে চাই। রজোগুণ কর্মের আসক্তি সৃষ্টি করে মানুষের ওপর নিজের অধিকার স্থাপন করে। তাতে নিজেকে বসে করে মানুষের সব ভাল দিক দেখায় আর আবাসিকে সত্য বলে মনে করে সঙ্গে খারাপ কেউ নষ্ট করতে পারে না শক্তি সৃষ্টি করে। বর্তমানে (ছেলেমেয়েদের )যে আকর্ষণ, মেয়েদের প্রতি ছেলেদের বা ছেলেদের প্রতি মেয়েদের যেটাকে প্রেম বলি ভুল করে।সে আকর্ষণীয় রজোগুণের মধ্যে পড়ছে। আকর্ষণের মূল কারণ ভালোবাসা নয় আর হৃদয়ের সাথে মিলন ও নয়। এখানে মূল আকর্ষণ হলো চামড়ার বা শারীরিক সম্পর্ক করে সমায়িক আনন্দ লাভ করা। কোন ব্যক্তি যদি বাকযুদ্ধ লড়াই বা হিংসা শুরু করে তাহলে তার মধ্যে রজ গুণের মাত্রা বেশি থাকে।
সত্ত্বগুণ
সত্ত্বগুণ হলো সচেতনতা ও বিবেক শীল। যার মধ্যে ভাবনা, বিচার ও চিন্তা করার ক্ষমতা আছে। "আমি" নির্ধারণ করবো যে কখন কাজ করবো আর কখন বিশ্রাম নেব। আর এই "আমি" টাই হলো শতগুণ যেটা মানুষকে পবিত্র বানায় ও প্রেম গুণের সঞ্চারিত করে । যদি এটার উপর নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে ভালো খারাপের পার্থক্য মানুষ পার্থক্য বুঝতে পারেনা। যার মধ্যে শতগুণ বেশি থাকবে সে নির্ধারণ করতে পারবে যে লড়াই যুদ্ধ কখন করা প্রয়োজন আর কখন বিশ্রাম এর প্রয়োজন। সে কারোর উত্তেজনায় কাজ করে না, কারো উস্কানিতে ও প্ররোচনা তে আসে না । যে ব্যক্তি উত্তেজনা, নিজের রাগ হওয়ার আগেই নিজের মনোভাবকে আয়ত্তে রাখতে পারে তার মধ্যে শতগুণ বেশি থাকে। শতগুণ কে বাড়ানোর অর্থ হল বিবেককে বাড়ানো, নিজের চিন্তাশীল হওয়া, সংবেদনশীল হওয়া, ভালো-মন্দের বিচার করতে পারা ।
শ্রী রামকৃষ্ণদেব ভক্তদের অনেক গল্প বলতেন তাদের মধ্যে একটা গল্প হলো এক ধনী ব্যক্তি বোনের মধ্যে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনজন ডাকাত এসে তাকে ধরে ফেলে সবকিছু কেড়ে নেওয়ার পর একজন ডাকাত বলেন যে তাকে মেরে ফেলা উচিত কারণ সে বেঁচে থাকলে সবাইকে সবকিছু বলে দিতে পারে তাই একটা অস্ত্র নিয়ে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন। দ্বিতীয় ডাকাত বলে উঠলেন তাকে মেরে ফেলে কোন লাভ নেই। তাকে একটা গাছের সাথে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেধে ফেলল সে সেখান থেকে আর যেতে পারবে না আর পুলিশকে ও খবর দিতে পারবে না। এভাবে তাকে বেঁধে রেখে ডাকাতেরা চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তৃতীয় জন ডাকাত ফিরে এসে তার ব্যথা ও যন্ত্রণা অনুভব করে ও তার প্রতি একটা করুণার ভাব প্রকাশ করে তাকে সেই বন্ধন থেকে মুক্ত করেন ও তাকে বাড়ি যাবার পথ দেখিয়ে দেন। সে ধনী ব্যক্তি তাকে তার সঙ্গে সেপথ ধরে তাকে তার বাড়িতে যেতে বলেন কারণ সে ভালো মানুষ ছিলেন এবং সে তার বাড়ি গেলে খুব আনন্দিত হবে এই বলে সে তাকে প্রার্থনা করলেন। কিন্তু তৃতীয় ডাকাতে বললেন যে যদি যায় তাহলে পুলিশ তাকে ধরে ফেলবে, তাই তিনি গেলেন না। এভাবে যে গল্পটা শেষ হল এবং এর থেকে এই গল্পের তাৎপর্য টা বোঝা গেল যে প্রতিনিয়ত যে ডাকাতটি তাকে হত্যা করতে বলেছিলেন তিনি হচ্ছেন তমোগুণের অধকারী যা বিনাশের কারণ। দ্বিতীয় জন ডাকাত রজ গুণের মানুষ, সংসারে আবদ্ধ নানা কাজে জড়িত। যা নিজেকে ঈশ্বরকে ভুলিয়ে থাকে । তাই সত্ত্বগুণ নিজের ভেতরে যে চেতনা, ভক্তি, বিবেক শীলতা, দয়া, করুণা, বিচার শক্তির বিকাশ ঘটায়। শতগুনশতগুন এর দাঁড়ায় ব্যক্তির মনে ধর্ম ভক্তি ভাব ফুটে ওঠে ও ঈশ্বরের পথ দেখিয়ে দেই ।
স্বত্ত্ব গুণের মাত্রা বেশি থাকলে তুমি নিজেকে বুঝতে পারবে যে কোনটা করা উচিত আর কোনটা করা অনুচিত।
🙏🏽হরে কৃষ্ণ🙏🏽১১৭৬ হরে কৃষ্ণ 🙏🏽
🙏🏽রাধে রাধে 🙏🏽
আপনারা আপনাদের মন্তব্য জানাবেন। আমার এই page টা share আর subscribe করবেন এরকম অনেক কিছু জানতে। page টা share করবেন যাতে অনেক মানুষ এটা পরে উপকৃত হয়।তারা যাতে নিজের সমস্যা থেকে নিজেকে বের কোরতে পারে, নিজেকে চিনতে পারে, নিজেকে motivate করতে পারে। এটা share করে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে দিন, যাতে তারা ও এটা পরের help পায়।
খুব ভালো কিন্তু কোথাও কোথাও বাক্য বিন্যাসে ভুল আছে।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ, আমি এগুলো ভালো করে লিখবো আর পরেরবার chek করবো
উত্তরমুছুন