অহংকারী ব্যক্তির সাথে কি হয়?Ahankari bektir sathe ki hoi?

অহংকারী ব্যক্তিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও সনাক্তকরণ 



অহংকার শব্দ টা ছোট হলেও তার প্রভাব ভয়ঙ্কর হয়। আমি সর্বশ্রেষ্ট এটা ঠিক হলেও যদি কেউ ভাবতে শুরু করে আমিই সর্বশ্রেষ্ট অন্য কেউ নয়, ঠিক তখনই অহংকারের জন্ম। অহংকার যুক্ত মানুষ নিজেকে ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি কে ভালবাসতে পারে না। কেন কি তার জীবনে সে নিজেকে ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে কোন স্থান দেয় না। সে নিজেকে নিয়েই পূর্ণ থাকে শুধু। তার খুশি, তার দুঃখ, তার সুখে নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পায় না। সে নিজেকে ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে গুরুত্ব দিতে পারে না। সে এতটাই self-centred হয় যে তার নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে স্পেশাল মনে হয় না। না সে আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের কদর করতে পারে। না সে সম্পর্ককে কদর করতে পারে। কোন মানুষ যদি তার জন্য ভালো কিছু করে সেজন্য সে নিজেকে অলরেডি desurve মনে করে। সেই রকম ভাবে যে এরকম তার সঙ্গে হতে হবে। অহংকার পরিপূর্ণ ব্যক্তি খুব জলদি নিজেকে অপমানিত অনুভব করে ও খুব তাড়াতাড়ি রেগে যায়, সব কথাতে নিজের শক্তির পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। তার পুরো জীবনটা নিজের অহংকার প্রমাণ করার জন্যই পেরিয়ে যায়। সে নিজের অহংকার কে বাঁচানোর জন্য যেকোনো কোন সম্পর্ক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এরকম মানুষ কোন মানুষের সম্মান করতে পারে না। এরকম মানুষের সাথে আপনি যতো কিছুই করুন না কেন আপনাকে কখনো সম্মান করবে না। এরকম মানুষ যে কোন মানুষের উপকার কে ভুলে যায়। যদি সে কোন ব্যক্তির জন্য সামান্য কিছু করে তো সেটা সারা দুনিয়াকে বলে বেরোবে। তার জন্য যদি কেউ জীবন দিয়ে দেয় তাহলে তার কোনো প্রভাবই পড়ে না। সে দেখতে পায় না এসব কারণ সে নিজের অভিমানী সব সময় পরিপূর্ণ থাকে তার জীবন তার নিজেকে ছাড়া অন্য কোন মানুষের মধ্যে কোন গুন দেখতে পায়না।




আমরা রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী শুনেছি। এই কাহিনী আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। মহাভারতে দুর্যোধনের অহংকার ছিল যে তার কাছে ভীষ্ম পিতামহ, গুরু দ্রোণাচার্য, মহাবীর কর্ণ ও আর বিশ্ববিজয় করা সেনাবাহিনী তার সঙ্গে। তাকে কেউ পরাজিতই করতে পারবেনা। সে এরকম মনে করত যে সে পাণ্ডবরা তার কি করে নেবেন। পান্ডবদের সে তুচ্ছ ভেবেছিল। সে কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে পান্ডবদের ছোট সেনা তাদের এত বড় সেনা বাহিনীকে পরাজিত করে দিতে পারে। অহংকারী ব্যক্তি ঠিক এ রকমই করে।যে নিজে নিজের সামনে আসা কোনো ব্যক্তিকে তুচ্ছ বলে মনে করে। ভাবে সে তার পায়ের নিচে। সে তার কিছুই করতে পারবেনা। ঠিক এই জন্যই অংকারি ব্যক্তির পতন হয়ে যায়।

অন্যদিকে রামায়ণের রাবণ যখন বর লাভ করে এতটাই শক্তিশালী হয়ে গিয়েছিল যে সে দেবতাদের উপর বিরক্ত করেছিল। কিন্তু যখন সে জানতে পারে যে শ্রীরাম ও তার বানর সেনা সমেত লঙ্কায় আক্রমণ করে দিয়েছেন। তখন সে নিশ্চিন্তে ছিলেন। আর এটা ভেবেছিলেন যে মানুষ এবং বানর রাক্ষসের আহার তারা তাদের কি অনিষ্ট করে নেবেন। তাদের খেয়ে ফেলবেন। সে কখনোই ভাবতে পারেনি যে তারা লঙ্কা জয় করতে পারবে, রাবণের সেনাদের পরাজিত করে ফেলবে। অহংকারী ব্যক্তি ও তার জীবনের ঠিক এরকমই ভুল করে। একটু শক্তি ও পদ লাভ করলেও সে নিজেকে অন্য ব্যক্তির থেকে অনেক মহান মনে করে। আর বাকি তার সামনে আসা ব্যক্তিদের নিচু ও তুচ্ছ ভাবে দেখতে থাকে। তাদের কে খাটো করতে ও নিচু করতে কোন সুযোগ ছাড়ে না সে। পুরোটাই চেষ্টা করে যে সে এটা প্রমাণ করে দেবে  সেই সব থেকে শ্রেষ্ঠ ও শক্তিশালী ব্যক্তি।

অহংকারী ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির পদ, প্রচেষ্টা ও সাফল্যকে সহ্য করতে পারে না। তার মনে হয় শুধু তাঁরই প্রশংসা হোক, শুধু তারই প্রতিষ্ঠিত হোক। সব মানুষ শুধু তার বিষয়ে চর্চা করে। যদি কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির চর্চা শুরু করে সেখানে অংকারি ব্যক্তি সহ্য হয়না। তার এরকম মনে হয় সব সময় সে সেন্টার অফ অ্যাট্রাকশন এই হয়ে থাকতে চাই। সবাই সবসময় তার প্রতি থাকে সবার ধ্যান। আর যখন সে অ্যাটেনশন পায় না তখন সে নিজেকে অপমানিত মনে করে।

অহংকারী ব্যক্তি সবসময় ইনসিকিউরিটিতে ভুগতে থাকে। একটা ভয় তাকে ঘিরে থাকে। কেন কি সে ব্যক্তি অন্যদের ভয় খাওয়ায় সে ব্যক্তির সবথেকে বেশি ভয় থাকে।অহংকারের  দুটি ছেলে একটা ভয়, অন্যটি ঈর্ষা। অংকারি ব্যক্তি সর্বদা অন্য ব্যক্তিদের ভয় দেখানোর কারণ সে নিজেই ভয় পায়। যে বাহাদুর ও বীর হবে সে কখনো অন্য ব্যক্তিদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করবে না। সাহসী ব্যক্তি তারাই যারা অভয় ও নির্ভয় করে মানুষকে। তারা কখনোই ভয় দেখায় না। তারা কখনো হিংসা করে না। যেখানে অহংকার সেখানে অবশ্যই ঈর্ষা ও হিংসা থাকবে।

মানুষ বার বার অহংকারকে বহন করে সামলাতে চাই কিন্তু বার বার অহংকার পতিত হয়। এসব মানুষের বুদ্ধি ভ্রষ্ট হয়ে যায়।তারা নিজেকে কখনো বদলাতে চাইনা, কখনো নিচু হতে চাইনা।মানুষ যতটা তার অহংকার ও অভিমান কে বাঁচানোর জন্য যতটা নিষ্ঠা দেখায়। যতটা অন্য ব্যক্তি দের নিচু দেখাতে, ঝগড়া করতে যতটা নিশ্চয়তা দেখায়, যদি অতটা নিশ্চয়তা ও ditermination মানুষকে প্রেম ও সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য দেখায় একে অন্যের প্রতি যত্ন নেওয়ার জন্য দেখায় তাহলে পৃথিবীটা স্বর্গ হয়ে যাবে। স্বর্গ-নরক অন্য কোথাও নেই, এটাই পৃথিবীতে আছে। আমরা এই পৃথিবী কে নরক করি,  আর আমরা এই পৃথিবীতে স্বর্গ করতে পারি।

 যেখানে অহংকার থাকে সেখানে প্রেম ভালোবাসা থাকতে পারে না, সেখানে বিশ্বাস হতে পারে না।যেখানে মানুষ আপনাকে রেস্পেক্ট করবে না, সম্মান করবে না, মানুষ আপনাকে ভয় পাবে, আর যে ভয় পাবে সে হৃদয় থেকে কখনোই রেস্পেক্ট করতে পারবে না। যে ব্যক্তির অহংকার আছে তার হৃদয়ে প্রেমের জন্ম কখনো নিতে পারে না। তার হৃদয় শুধু ঘৃণা ও হিংসায় পরিপূর্ণ থাকে।

যদি আপনি ও চান যে আপনার জীবনে প্রেম চান তাহলে আপনার হৃদয় অহংকারকে জায়গা দেওয়া চলবে না। এজন্য সম্পর্ক ও দূরত্ব চলে আসে।সেজন্য আপনার জীবনে অনেক ঝামেলা চলে আসে। একটা অহংকার কে বাঁচানোর জন্য আপনি সর্বদা ঝুঁকি নেন। আপনার অহংকার কি এসব মানুষের থেকে বড় হয় যে আপনাকে ভালোবাসেন! অহংকার কি আপনার খুশি ও জীবনে থেকে বড়! যেখানে আপনি আপনার মনের শান্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেন। অহংকার এমন একটা জিনিস যেটা একটা মানুষের পুরো জীবনটা কে জ্বালিয়ে ছারখার করে নষ্ট করে দেয়। যদি আপনি আপনার জীবনে খুশি চান, সম্পর্কে মিষ্টতা ও প্রেম চান তাহলে আপনার জীবনে কখনোই অহংকার কে জায়গা দেবেন না।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুর্খ মানুষ দের চেনের কিছু লক্ষণ। Murkho manush der chener upai

CRASH and LOVE

প্রেষণা বা Motivation কি? প্রেষণার চক্র! প্রেষণার তত্ত্ব -