ভগবানকে কেন সবাই ভালোবাসে* 🇲🇰
🇲🇰 *ভগবানকে কেন সবাই ভালোবাসে* 🇲🇰
আমরা বি. কে.রা ভগবানকে চিনেছি, জেনেছি বলে ভগবানকে আমরা বিশ্বাস করি। তাই বাবা বলেন আমরা আস্তিক, আর বাদ বাকি যারা ভগবানের প্রকৃত পরিচয় জানে না, চেনে না তাঁকে, তারা হল নাস্তিক। আমরা ভগবানকে চিনেছি, জেনেছি বলে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি। কিন্তু নন বি. কে.রা ভগবানকে সঠিক ভাবে না চিনলেও অনেকেই তাঁকে না জেনেই ভালবাসে। কিন্তু বি. কে. হোক কিম্বা নন বি. কে. ভগবানকে আমরা ভালবাসি কেন ?
এমনিতেও কোনো কোনো দেহধারী মানুষকেও আমরা তাকে না দেখেও তার সম্বন্ধে শুনে, তার কীর্তি বা গাথার কথা শুনে, তার গুণের কথা শুনে তার প্রতি ভালোবাসা তৈরী হয়। তখন তাকে আরও ভালো ভাবে জানার ইচ্ছা বা অত্যন্ত তাগিদ অনুভব করি আমরা। সেই ব্যক্তি দেখতে সুন্দর হোন কিম্বা না হোন সেটা তখন অগ্রাধিকার পায় না। তার মধ্যে থাকা গুণ বা তিনি যে যে কাজ করেছেন তা জানতেই আমরা আগ্রহী হই। চোখে দেখা অর্থাৎ তার বহিরাবরণ দেখে যদি তাকে ভালো লাগে সেই ভালো লাগাটা মনের উপরের level পর্যন্ত স্থান পায় বলে দ্রুতই সেই ভালো লাগাটা হারিয়ে যায়। কিন্তু তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তার ব্যক্তিত্ব, তার চিন্তাধারা, তার বিশেষ গুণ বৈশিষ্ট্য আমাদের মনের গভীর তলকে ছুঁয়ে যায়। সেই ভালো লাগাটা তাই স্থায়ী হয়ে যায়। কিন্তু সেই গুণী আত্মাকে সামনাসামনি দেখার পরে তার গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ হওয়ার পরেও তার সদ্ব্যবহার করার পরিবর্তে দেহরূপে যদি দেখি তাকে আরও ভালো ভাবে জানার সুযোগ এলেও কাজে লাগানোর থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে ফেলি।
ঈশ্বর হলেন নিরাকার । কিন্তু প্রীত বুদ্ধির যারা তারা তো জানেই কিন্তু সংশয় বুদ্ধির যারা তারাও কোথাও না কোথাও বিশ্বাস করে তিনি কল্যাণকারী, তিনি সত্য আর তিনি সুন্দর। সুন্দর তিনি সকলের প্রতি তাঁর সমান ভালোবাসা বলে, তিনি পবিত্রতার সাগর বলে, তিনি সর্ব গুণের সাগর বলে। তাঁর চিন্তনে, তাঁর কথা শ্রবণে ভক্ত হোক কিম্বা জ্ঞানী সকলের মনের আরাম হয়। কিন্তু যখন তাঁকে কৃষ্ণের মোড়কে মুড়ে ফেলা হয়, কিন্তু সকলের তো কৃষ্ণের মোড়ক পছন্দ নাও হতে পারে। কারো কালীর মোড়ক পছন্দ, কারো রামচন্দ্রের মোড়ক পছন্দ, কারো অন্য কোনো...। কিন্তু কোনো মোড়কই যে সর্বজনগ্রাহ্য নয়। আবরণে মুড়ে ফেললেই যত ভেদাভেদ। কোনো শরীরের মোড়ক নেই বলেই সকল ধর্মের মানুষ পরমাত্মাকে ঈশ্বরকে আল্লাহকে গডকে ভালবাসে।
ঠিক সেই রকমই আমরা দেহবোধে থাকি বলে আমরাও ভগবান যেমন সবাইকে একভাবে ভালবাসেন সেই রকম এক রকমভাবে সবাইকে ভালোবাসতে পারি না। কোনো বাবা বা মা তার নিজের সন্তানকে যতটা ভালোবাসেন, একই রকম ভাবে কী অন্যের বাচ্চাকেও ভালোবাসে ? বাসতে পারে না, কারণ দেহ বোধ। আমি হলাম এই শরীর। কিন্তু পরমাত্মার জ্ঞানের আধারে যখন আমরা ধীরে ধীরে এই দেহ বোধ থেকে নিজেকে সরিয়ে আমি আত্মা আর অন্যরাও হল আত্মা, তারাও খুব ভালো, সেও এই ড্রামার অ্যাক্টর, সে তার পার্ট প্লে করছে। আমি তাকে যেটা দিয়েছিলাম সেটাই সে এখন আমাকে ফেরৎ দিচ্ছে, এটা চিন্তা করবার অভ্যাস করি, তখন একদিকে যেমন সব আত্মাকেই ভালো লাগবে, মনে হবে ওরাও আমার, অন্যদিকে অন্যরাও সেই আত্মাকে ভালবাসবে। কারণ সে তখন নিজেকে দেহ বোধ থেকে detached হওয়ার পুরুষার্থ করছে।
এখানে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে যে, সেই পুরুষার্থী আত্মাকে তাহলে সকলে ভালোবাসে না কেন ? এখানেও সেই একই কথা এসে যায়। দেহ বোধ আছে বলে যেমন আমরা ভগবানকে কখনো ভালবাসি কখনো ভুলে যাই, কখনো তার ওপরে রাগ করি, সেই একই রকম হয় মানুষের ক্ষেত্রেও। কখনো কখনোর পরিবর্তে যেদিন আমরা ভগবানকে সব সময় প্রতিক্ষণ প্রতি মুহূর্তে, এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারব না, তাঁরই ভালোবাসায় বুঁদ হয়ে থাকতে পারব, তখন তাঁর সন্তানদেরকেও সমান ভাবে ভালোবাসতে পারব সম্পূর্ণ রূপে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন